বিনোদন ছাড়া মানুষের জীবনের উল্লেখযোগ্য অংশ অপূর্ণ থেকে যায়। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনোদনের অনুষঙ্গের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানো, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি প্রাধান্য পেয়ে আসছে। বর্তমানে বিনোদনের অধিকাংশই হয়ে পড়ছে ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর; যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি। স্যাটেলাইট বা ইন্টারনেটের কল্যাণে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে এখন ঘরে বসেই পৃথিবীর যে কোনো অনুষ্ঠান উপভোগ করা সম্ভব। হলিউডের সিনেমা একসময় চলচ্চিত্র জগতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হতো। এখন স্ট্রিমিং করে ইন্টারনেটে চলচ্চিত্র দেখার প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্স হলিউডকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করার পর্যায়ে চলে গেছে। এ ছাড়াও ইন্টারনেট গেমিং, আইপি টিভি (ইন্টারনেট প্রটোকল টিভি), ইউটিউবসহ আরো অসংখ্য অনলাইন বিনোদন মাধ্যম রয়েছে যেগুলো যে কোনো ব্যক্তি তার পছন্দসই গেম, ভিডিও, গান ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ ও ডাউনলোড করতে পারে। একটা সময় ছিল যখন সকল বিনোদনের অনুষ্ঠান তৈরি হতো জাতীয় কৃষ্টি কালচার ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করে। তথ্য প্রযুক্তির প্রভাবে এবং বিশ্বায়নের এ যুগে সেখানেও বৈচিত্র্য এসেছে। বিশ্বগ্রামের চেতনার সাথে তাল মিলিয়ে এক দেশের মানুষ অন্য দেশের ধ্যানধারণা, চিন্তা, সংস্কৃতির ছোঁয়ার সাথে পরিচিত হচ্ছে।
অনলাইন নিউজ, টিভি প্রোগ্রাম, গান, নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদি যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো স্থানে মুহূর্তের মধ্যেই নিজের স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে দেখতে ও উপভোগ করতে পারছেন। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেমন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, ম্যাসেঞ্জার, স্কাইপি ইত্যাদি ব্যবহার করে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের সাথে যোগাযোগসহ বিনোদন জগতের আপডেট তথ্য, ভিডিও, ছবি খুব সহজেই পর্যবেক্ষণ এবং 'লাইক'-এর মাধ্যমে জনমত যাচাই করতে পারছেন। ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি তার ভালো লাগা বা মন্দ লাগা বিষয়ে নিজের মতামত দেওয়া, মতবিনিময় কিংবা অন্যকে শেয়ার করতে পারায় বৈশ্বিক যোগাযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
তবে এক্ষেত্রে আমাদের সকলের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ভিন্ন সংস্কৃতির ছোঁয়ায় স্বদেশীয় জাতিসত্তা যেন হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা ছাড়াও আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মাদকাশক্তির অপব্যবহারের ন্যায় আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে, ভাটা পড়ছে পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে। কর্মস্থল এবং শিক্ষাক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে, সেইসাথে ব্যক্তিগত তথ্যে অযাচিত হস্তক্ষেপ, একজনের ছবি বা তথ্য অন্য নামে চালিয়ে দেয়া কিংবা অপপ্রচার ও গুজব সমাজে ছড়িয়ে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার ঘটনাও নিয়মিতভাবে ঘটছে।